প্রকাশিত: ১১/০৯/২০১৭ ৭:২৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৪৩ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
হনুফা বেগম। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া দিয়ে শনিবার রাতে বাংলাদেশে ঢুকেছেন এই রোহিঙ্গা নারী। সঙ্গে আছেন স্বামী, শাশুড়ি ও ৩ সন্তান। মাথায় চিন্তা কার কাছে গেলে একটু আশ্রয় পাবেন। কোথায় যাবেন বুঝতে না পেরে রাস্তার ওপরই বসে পড়েছেন তিনি।

জীবন বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে এক কাপড়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন জানিয়ে এই নারী বলেন, ‘রাতে নাফ নদী পার হয়ে উখিয়ার পালংখালী দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছি। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। গুলি করে সবাইকে মেরে ফেলছে। প্রাণভয়ে সবকিছু ছেড়ে এক কাপড়ে চলে এসেছি। ’

তিনি বলেন, ‘অনেক পথ হেঁটে, পাহাড় পাড়ি দিয়ে কষ্ট করে এখানে আসতে হয়েছে। অসুস্থ শাশুড়ি ছোট ছোট বাচ্চাদের কখনো কোলে নিয়ে, কখনো হাঁটিয়ে আনতে হয়েছে। তিনটা পাহাড় পাড়ি দিতে হয়েছে। চারদিন ধরে হেঁটেছি। অনেক কষ্ট করে এখানে আসতে হয়েছে। ’

‘ওখানে আমাদের কোন অভাব ছিল না। তিনটা গাভী ছিল, নিজেদের জমি ছিল। ওই জমিতে বছরে দুবার ফসল হতো। আমার স্বামী মানুষের জমিতে কাজ করতো। খুব সুখেই ছিলাম। এখন গাভী, জমি, ঘরবাড়ি, জিনিসপত্র সব ফেলে এক কাপড়ে চলে আসতে হয়েছে। একটা পাটি ছাড়া আর কিছুই আনতে পারিনি। এটাই এখন একমাত্র সম্বল। ওখানে আমরা বাদশার মতো ছিলাম। এখানে ফকির হয়ে চলে আসতে হয়েছে। ’ যোগ করেন হনুফা বেগম

হনুফার স্বামী মো. জামাল বলেন, ‘এখানে এসে প্রাণ বাঁচিয়েছি। কিন্তু বাপ-দাদার ভিটে, জমিজমা ফেলে চলে আসতে হয়েছে। ওখানে আমাদের সব ছিল, এখানে কিছুই নেই। ’

পালংখালী দিয়ে শনিবার রাতে বাংলাদেশে ঢুকেছেন আলাউদ্দিন নামে আরেক রোহিঙ্গা। তার কণ্ঠেও ঝরে একই কষ্টের সুর, ‘ওখানে আমাদের জমি ছিল। বাবা আর আমার দুই ভাই মিলে জমিতে কাজ করতো। আমি বাংলাদেশে ঢুকে বোয়ালখালীতে গিয়ে একটি নার্সারিতে কাজ করতাম। ফসল কাটার সময়ে মানুষের জমিতে ফসল কাটতাম, নাহলে দিনমজুরের কাজ করতাম। ভাত-কাপড়ের অভাব ছিল না। কিন্ত‍ু এখন আমাদের কিছুই নেই। আমার বাবা-ভাইরাও বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু তাদের কোন খোঁজ পাচ্ছি না। ’

বছর ষাটের কালামিয়ার মংডুর ঘরাখালী এলাকায় নিজের গ্যারেজ ছিল, বাস ছিল। তাতে বেশ ভালোই চলে যাচ্ছিল সংসার। কিন্তু নতুন করে অস্থিরতা শুরু হলে সেই গ্যারেজ, তিলে তিলে গড়ে তোলা বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। তাই কিছুদিন আগেও টাকাপয়সার মালিক থাকা কালা মিয়া এখন একেবারেই পথের ফকির।

কালা মিয়া বলেন, ‘আমার গ্যারেজ ছিল, তাতেই বেশ ভালোই চলে যেত সংসারের খরচপাতি। কিন্তু অস্থিরতা শুরু হলে সেনাবাহিনী আমার এক ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলে। আমার ঘরবাড়ি, গ্যারেজ পুড়িয়ে দেয়। তাই পরিবারের ৯ সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। সব হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছি। ’

গত মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছেন রোহিঙ্গারা।

এর মধ্যে শনিবার জাতিসংঘ তথ্য দিয়েছে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তিন লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এছাড়া সহিংসতা শুরুর পর মিয়ানমার প্রায় রোহিঙ্গাশূন্য হতে চলেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য এসেছে।

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...